
প্রকাশিত: Wed, Dec 14, 2022 3:11 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 7:03 AM
দুর্ধর্ষ জুটি, দ্য লিওনেল মেসি এবং স্কালোনি
সাদাত হোসাইন
সম্ভবত সবচেয়ে কম কথা হয়েছে তাকে নিয়ে। কিংবা হয়নি। কিংবা হলেও প্রতি ম্যাচের আগেই তাঁর টিম সিলেকশন কিংবা ফরমেশন কিংবা টেকনিক নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককেই। প্রথম ম্যাচের পর প্রতি ম্যাচের আগেই একাদশ নিয়ে তাঁর প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছি। এটা কেন করেছে, ওটা কেন করেনি, একে কেন খেলিয়েছে, ওকে কেন খেলাননি। কিন্তু তারপর হঠাৎই মনে হলো, কোনো ম্যাচেই আর্জেন্টিনা সেই দুর্ধর্ষ ফুটবল খেলেনি, যে ফুটবল খেলে প্রতিপক্ষকে ভেঙেচুরে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়া যায়। চার, পাঁচ, ছয় গোল দেওয়া যায়। প্রবল আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটতে ফুটতে চিৎকার করে নিঃসংকোচে বলা যায়, ‘আমরা কাপ জিততে এসেছি, আমরাই ফাইনাল খেলব। কিংবা আমরাই চ্যাম্পিয়ন। আমাদের দলই সেরা। আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চ সবচেয়ে শক্তিশালী। এই ভাবনাও আসেনি কখনো।
বরং মনে হয়েছে, এই প্লেয়ারটা ইনজুরিতে পড়লে তাঁর রিপ্লেসমেন্ট কে হবে? আছে? নেই। রিজার্ভ বেঞ্চে তার যুতসই কোনো বিকল্প নেই। প্রতি ম্যাচ শেষেই মনে হয়েছে, এবারের মতো কোনোমতে তো পার হয়ে গেলাম। কিন্তু পরের ম্যাচে? পরের ম্যাচে কী হবে? এবারের প্রতিপক্ষ তো আগের দলের চেয়ে শক্তিশালী। এদের র্যাংকিং এই, পরিসংখ্যান এই, হেড টু হেড রেজাল্ট এই। বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স এই। পারবে তো এদের সঙ্গে? গত ম্যাচে যেভাবে খেলেছে, এই ম্যাচে সেভাবে খেললে আর রক্ষা নাই। এমন সংশয়, দ্বিধা, শঙ্কা নিয়েই প্রতিটি ম্যাচ দেখতে বসেছি। আর ভেবেছি, কোচ কী ভাবছেন? ভয়ানক স্ট্রেসফুল মোমেন্টেও নির্বিকার ভঙ্গিতে অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁতে নখ কাটতে থাকা, কিংবা ভাবলেশহীন চোখে অন্য কোথাও তাকিয়ে থাকা, কিংবা মাথা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে থাকা মানুষটা কিন্তু তখনও স্থির, নির্বাক। হয়তো তখনও তিনি ভাবছেন। ভেবেই চলেছেন, পরবর্তী রণসজ্জা। কী সেই রণসজ্জা? প্রতিটি দলের জন্য আলাদা কৌশল, আলাদা রক্ষণ, আলাদা আক্রমণ।
নিজের ও প্রতিপক্ষের সবল ও দুর্বল দিকের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ। তারপর কৌশল নির্ধারণ। তারপর প্রয়োগ। ফলে প্রতি ম্যাচে বদলেছে আর্জেন্টিনা। বদলেছে খেলোয়াড়রাও। তাদের ভূমিকাও। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে যেমন হঠাৎ কাউন্টার এটাকে ভয়াল হয়ে ওঠা এই আর্জেন্টিনাকে শেষ কে কবে দেখেছে? মাঝমাঠ দখলে রেখে ওয়ান টু ওয়ান পাসে ধীরে ধীরে আক্রমণে যাওয়া সেই চিরাচরিত আর্জেন্টিনা হঠাৎ করেই যেন মাঝমাঠ ছেড়ে দিলো প্রতিপক্ষের কাছে। ছেড়ে দিলো বল পজেশনও। কী আশ্চর্য, শেষ কবে এতো কম বল পায়ে রেখেছে তাঁরা? কেন? কারণ কি এই যে, ক্রোয়েশিয়ার এই দলের মিডফিল্ড এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সেরা? তাই তাদের শক্তির জায়গায় নিজেরা মুখোমুখি হতে চায়নি আর্জেন্টিনা? বরং তাদের মাঝমাঠ তাদেরই ছেড়ে দিয়ে লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হলো আরো খানিক কাছে, নিজেদের রক্ষণে। কিন্তু সেই রক্ষণ আজ দুর্ভেদ্য। জমাট। সেই চিরচেনা আর্জেন্টিনার দুর্বল রক্ষণ হঠাৎ করেই যেন হয়ে উঠল স্মরণকালের সেরা। আর প্রায় বিনাযুদ্ধে মাঝমাঠ দখলের টোপ গেলা ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে এলো সদম্ভে, অসতর্কতায়ও। তাঁরা হয়তো ভাবতেই পারেনি যে চিরাচরিত সেই আর্জেন্টিনা তাদের তূণ থেকে নতুন তীর বের করবে বলেই তাদের ইচ্ছে করেই প্রলুদ্ধ করে টেনে এনেছে কাছে। কারণ পেছনের জায়গা ফাঁকা করতে হবে তাদের। একটা লম্বা পাসের জন্য, একটু দ্রুত গতির জন্য, কিংবা কয়েকটি ম্যাজিকাল ড্রিবলিং করে ভোঁ দৌড়ের জন্য।
অর্থাৎ ওই ফাঁকা জায়গাটুকুই মূলত তীর ছোঁড়ার জায়গা। আর সেই তীর কী? কাউন্টার এটাক। হ্যাঁ, এ এক অপরিচিত আর্জেন্টিনা। আমাদের কাছেতো বটেই। সারারাত যে চিরাচরিত, অতি পরিচিত আর্জেন্টিনার সিলেবাস পাঠ করে মাঠে গিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া, তাদের কাছেও। এটি যেন ঝকঝকে নীল আকাশে হঠাৎ বজ্রপাতের মতো বিষ্ময়কর ব্যাপার, ভয়ংকরও। কিন্তু ততোক্ষণে ঘটনা যা ঘটার ঘটে গেছে। নতুন এই কৌশলের সঙ্গে নতুন করে খাপখাওয়ানোর কিংবা অন্য কোনো কৌশল নির্ধারণ কিংবা প্রয়োগের সময় বা সুযোগ কোনোটিই তখন ছিলো না। ফলে যা হবার তাই হলো। ক্রোয়েশিয়া যখন মাঝমাঠ দখলে নিয়ে খানিক আত্মতৃপ্তিতে ভুগছিল, কিংবা খানিক দ্বিধায়, কী হচ্ছে? ততোক্ষণে তূণ থেকে বের হওয়া তীরের মতোই কাউন্টার এটাক, গোওওওল। তিনটি গোলই প্রায় এই একই কৌশলে। আর সেই কৌশল চুপচাপ বসে থাকা, দাঁতে নখ কামড়ানো, কিংবা লাল চোখের জল মুছে নির্বিকার তাকিয়ে থাকা মানুষটার। সেই মানুষটার জন্য ভালোবাসা। হ্যাটস অফ, প্রিয় লিওনেল স্কেলানি । লেখক: কথাসাহিত্যিক। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
